Nishintika Biswas (Class - 6)

বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় সবুজ শ্যামল দেশ। এ দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশ তরুণ। তরুণদের মেধা, মনন এবং উদ্ভাবনী চিন্তা আগামী দিনের বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির  পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। একটি দেশের উন্নতি সেই দেশের অর্থনৈতিক সফলতা, রাজনৈতিক স্হিতিশীলতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, আইন, ধর্মীয় অনুশাসন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। তরুণ সমাজের চিন্তা-ভাবনা, উদ্যোগ ও কর্মপ্রেরণা আগামীর বাংলাদেশকে গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আগামীর বাংলাদেশকে আমি হিমালয়সম উন্নতির চরম শিখরে দেখতে চাই। এই রচনায় তরুণদের চিন্তা-ভাবনা ও তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে কিভাবে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবো। 

মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করন: অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য - এই ছয়টি মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সেই দেশ ও জাতি উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে। মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণে তরুণদের উপযুক্ত শিক্ষা ও নেতৃত্বের সুযোগ এবং সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদান অত্যন্ত জরুরি।

শিক্ষা ও প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ: বাংলাদেশকে আরও উন্নত, দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য আধুনিক শিক্ষা ও প্রযুক্তির সাথে তরুণদের তথা দেশের সকল জনগণের সমন্বয় হতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গণিত এসব ক্ষেত্রে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন তরুণদের প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর এইভাবেই দেশের উন্নতি সম্ভব। আগামীর বাংলাদেশে শিক্ষা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দেখতে চাই।

অর্থনৈতিক উন্নতি: আগামীর বাংলাদেশ হবে অর্থনীতিতে শক্তিশালী ও বানিজ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বৈদেশিক আমদানির হার কমিয়ে গড়ে তুলতে হবে আধুনিক বাণিজ্য নির্ভর বাংলাদেশ। বৈদেশিক বাণিজ্যের হারও বাড়াতে হবে। রেমিটেন্স যোদ্ধারাও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিকভাবে সফল ও শক্তিশালী একটি দেশই আগামীতে কাম্য।

দারিদ্র বিমোচন: দারিদ্র বিমোচনের মাধমে বাংলাদেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশকে দারিদ্রমুক্ত করতে হলে প্রশাসন, সরকার ও তরুণদের সক্রিয় হতে হবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রদান, কর্মমুখী শিক্ষা, এবং বেকারত্ব হ্রাসের মাধ্যমে তরুণরা সমাজ থেকে স্হায়ীভাবে দারিদ্রতা দূর করতে পারে। ক্ষুধামুক্ত, বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত সুখী দেশ আমাদের সকলের কাম্য।

নারীর ক্ষমতায়ন: নারীর ক্ষমতায়নই পারে জাতিকে আরো উন্নত মানুষিকতার করে তুলতে। দেশের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশই নারী। তাই নারীদের সুরক্ষা, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আগামীর বাংলাদেশে নিশ্চিত হবে বলেই আমার আশা। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারী নির্যাতন ও নারী বৈষম্য মুক্ত জাতি হিসাবে আগামীর বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ চাই।

দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসিত রাষ্ট্র: আমি মনে করি একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ ও প্রশাসন দেশের উন্নয়ন এর প্রধান শর্ত। সুশাসনের অভাব জাতির অগ্রযাত্রার অন্তরায়। তাই আমি এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতা বজায় থাকবে। একটি যোগ্য ও নিরেপেক্ষ নেতৃত্বই পারে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে। একটি দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসিত রাষ্ট্র সকলেরই কাম্য।

স্বাস্থ্যসচেতনতা: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। দেশের মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরো শক্তিশালী করে তোলা যায়। মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে জীবনের মান উন্নত করা যেতে পারে। আগামীতে একটি মাদকমুক্ত ও সুস্থ বাংলাদেশ চাই।

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষন: নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে করলে আগামীর বাংলাদেশ হবে গর্বের জায়গা। সংস্কৃতি চর্চা ও মূল ঐতিহ্য সংরক্ষন হতে পারে উন্নতির চাবিকাঠি।

পরিবেশের উন্নয়ন: আগামীর বাংলাদেশ হবে পরিবেশবান্ধব একটি দেশ যেখানে গাছ লাগানো, প্লাস্টিক বর্জন এবং পরিবেশ দূষণ কমানোর মাধ্যমে পরিবেশকে আরো উন্নত করা হবে।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ: সততা, শৃঙ্খলা ও মানবিক গুণাবলীর চর্চার মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন হবে। আর এভাবেই দেশ আরো এগিয়ে যাবে।

কর্মসংস্থানের সুযোগ: কেবল চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বেকারত্বের হার ও কমানো সম্ভব।

আন্তর্জাতিক পরিধি বৃদ্ধি: বিদেশী শিক্ষা গবেষণা এবং কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞ করে দেশের উন্নয়নে তা প্রয়োগ করতে হবে। গ্লোবালাইজেশন এর এই যুগে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে হবে।

বিজ্ঞানচিন্তা ও উদ্ভাবনীশক্তি: রোবোটিক্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলে বাংলাদেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ: সঠিক নেতৃত্ব, নির্বাচন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর মতো সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ আমাদের সকলের কাম্য। আগামীতে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চাই।

প্রযুক্তিগত দক্ষতা: বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে নিতে চাইলে প্রযুক্তিগত দক্ষতার কোনো বিকল্প নাই। কোডিং, ডাটা এনালিট্রিক্স এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মতো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে উন্নত বাংলাদেশ দেখতে চাই।

শান্তি ও স্হিতিশীলতা: ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার মাধ্যমে দেশের অভ্ভন্তরীন পরিবেশ শান্ত রাখা যায়। 

বাংলাদেশ হবে একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং উদার গণতান্ত্রিক দেশ। মেধা, পরিশ্রম ও সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করেই গড়ে উঠবে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ দেশ। প্রজন্মের একতাবদ্ধ চেষ্টা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা বাংলাদেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে ও দেশের ভবিষ্যৎকে আলোকিত করবে।